একশত ত্রিশঘর জলদাস
– আমির হোসেন
সুখটানটি শেষ না করেই কাশতে কাশতে নারিকেলি হুক্কাটিকে রসুই ঘরের আইতনার সাথে ঠেস দিয়ে রাখে বুড়ো হরিচরণ দাস। তারপর কামারশালার হাঁপরটির মতো হাঁপাতে থাকে বেশ কিছুটা সময় ধরে। উমাচরণ কর্মকারের মতো কোন এক অদৃশ্য কারিগর যেন বিরামহীন দড়ি টেনে টেনে গত ক‘মাস ধরে বেশি রকম বাড়িয়ে তুলেছে হরিচণের বুকের ভেতরের উঠানামাটাকে। হল্লুর হল্লুর কাশিটাও বেড়েছে বেদম। প্রতিটা কাশির দমকে ভেতরে যেন এক ধরণের হাতুড়িপেটা টের পায় হরিচরণ। তার শৈশবে দেখা ভরা বর্ষায় তিতাসের ঢেউয়ে উদলা ডিঙির গুলুইয়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে কাশতে থাকে হরিচরণ। কাশি উঠলে তার পিঠের কুজোটিও অতিমাত্রায় কুজো হতে হতে অনেকটা ধনুকের মতো বঙ্কিম হয়ে উঠে। এমনিতে পিঠের সাথে লেপ্টে আছে পেট। পান্থা খাওয়ার আগে ও পরে পেট ও পিঠের আকার আকৃতিতে কোন পরিবর্তন চোখে পড়ে না। পুরানো কবরস্থানে মাটি সরে বের হয়ে আসা কঞ্চিবাঁশের ফলার মতো পাজরের হাড়ের ফাঁকে ফাঁকে দেবে গেছে হরিচণের বুকের চামড়া। ভাঙা মুখ-মখন্ডলের সাচের উপর চোখ জোড়াও প্রায় কোটরাগত। কাঁশি উঠলে চোখ দু‘টিও ভিজে যায় আঁঠালো জলে। পিঁচুটিপড়া চোখে তখন চারদিক ঝাঁপসে দেখে সে। অদূরে স্তুপিকৃত হয়ে পড়ে আছে ক‘টি আধাছেড়া গাবের রসবিহীন ফিকে ধূসর হয়ে যাওয়া জাল। হরিচরণের ঝাঁপসা চোখে স্তুপটিকে ফিকে অন্ধকারের মতো দেখায়। তিতাসের তলায়ও আধা পানি আধা শুকনোয় পড়ে রয়েছে ছড়-বাকল উঠে যাওয়া, তক্তার প্রান্তে ফাটল ধরা, নড়বড়ে হয়ে যাওয়া সারি সারি বিভিন্ন রকম মাছ ধরা নৌকা। আলকতরাবিহীন নৌকাগুলির গায়ের কালো রঙ মুছে গিয়ে ফিকে ধূসর গেরুয়া হয়ে গেছে। একটি বড় উতার নৌকার ধনেশ পাখির ঠোঁঠের মতো চুখা-লম্বা ছেউটি এখন ভাঙা কঙ্কালের মতো ঝুলে আছে। কোন কোনটার বাতাজোড়াও নড়ভরে হয়ে ছেড়ে দিয়েছে পাতাম লোহার কামড়। আলগা হয়ে খাঁ হয়ে আছে কোনটির পাছার বাতা। চৈত্র মাসেরও অর্ধেক পার হয়ে গেছে। তথাপি জালগড়া, জালে গাব দেওয়া কিংবা নৌকা মেরামত করা বা তাতে আলকাতরা লাগানোর কোন তাড়া নেই জলদাসদের মধ্যে। কি এক অজানা আশঙ্কায় উৎসাহ হারিয়ে উদাসিন কাঞ্চনপুরের সব জলদাসরা।
বুকের হাঁপরটি কিছুটা স্বাভাবিক হলে পড়নের রংচটে ধূসর হয়ে যাওয় ধুতির কোন একটি প্রান্ত টেনে ঝাঁপসা চোখ দু‘টির জল মুছে পরিস্কার করে হরিচরণ। তারপর কুজো পিঠটাকে টেনে সোজা করার চেষ্টা করে। মাথা তুলে পূর্বদিকে তিতাসের দিকে তাকায়। ঘোলাচোখে খুব ভালো কিছু দেখতে পায় না। তবু কিছু একটা আঁচ করার চেষ্টা করে তলানিতে গিয়ে ঠেকা ক্ষিণরেখার মতো জলের দিকে তাকিয়ে। নাহ! জলের গায়ে পরিবর্তনের কোন লক্ষণ টের পায় না হরিচরণ। অদূরের তুলা গাছটি হতে ঘোড়ার চিৎকারের মতো চিহি চিহি চিহি হি চিহি হি করে করুণ সুরে ডেকে উঠে একটি শঙ্খ চিল। গাছটির মগডালে মনে হয় বাসা বানিয়েছে চিলটি। তিতাসে জলের অভাব অস্তির করে তুলেছে মৎহারী এসব পাখিগুলিকেও।
জেলেরা বর্ণগতভাবে ব্রাত্য, অর্থনৈতিকভাবে কোণঠাসা আর এরা বৈদিকযুগ থেকে বর্তমান কাল পর্যন্ত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী হিসেবে বিবেচিত। জেলেরা জলপুত্র। জলের ভৃত্য। জলের খেয়াল খুশির ওপর এদের বাঁচা মরা। জলাশয়ের জল ফুরিয়ে গেলে এদের নিদানের শুরু, জলধারা যৌবনবতী হয়ে উঠলেই এদের জীবনে সুদিনের সূচনা। বৈশাখ থেকে চৈত্র-এই বারো মাসকে ঘিরেই জেলেদের জীবন আবর্তীত। তাদের কাছে এক এক ঋতুর এক এক রং। ফাল্গুন-চৈত্র এই দু‘টি মাস জেলেরা দুঃসহ জীবন-যাপন করে। নদী-নালা, খাল-বিল এ সময় জলশূন্য হয়ে পড়ে। খাল-বিলের তলদেশে ফাটল ধরে। জেলেজীবনে খাদ্যাভাব চৈত্রের শেষে এমন রূপ নেয় যে, একে দুর্ভিক্ষও বলা যেতে পারে। পুরুষেরা নিষ্কর্মা দিন কাটায়। বাচ্চাকাচ্চারা ক্ষুধার যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে ঘন ঘন মায়ের মুখের দিকে তাকায়। এরকম দুঃসময়ে জেলেজীবনে পহেলা বৈশাখ আসে। পহেলা বৈশাখের আগে আসে চৈত্রসংক্রান্তি। চৈত্রের শেষ দিনে অনুষ্ঠেয় চৈত্রসংক্রান্তি জলপুত্রদের জীবনে বেঁচে থাকার প্রাণরস যোগায়। বর্ণহিন্দুদের দুর্গাপূজা, মুসলমানদের ঈদের মতো জেলেদের কাছে গঙ্গাপূজা, মনসাপূজা ও চৈত্রসংকান্তি সমান গুরত্ব পেয়ে থাকে।
চৈত্রসংকান্তির এক-দুইদিন আগে বাঁশের খোপে জমানো টাকা স্বামীর হাতে তুলে দেয় জেলেনীরা। সেই টাকা দিয়ে গেঁয়োবাজার থেকে শিমবিচি, সিদ্ধচাল, খৈ-এর ধান, গুড়, নারকেল, কাঁচাবাদাম কিনে নিয়ে আসে জলপুত্ররা। ঠাকুমারা, মায়েরা, পিসিরা, সারারাত জেগে মুড়ি-খৈ ভাজে, মোয়া-নাড়– বানায়, আটকড়ইয়া তৈরি করে।
চৈত্রের শেষ দিনে সকালে প্রত্যেক জেলে পরিবারের উঠোনে আগুন জ¦ালানো হয়। আগের দিন বিকেলে জলপুত্ররা দলবেঁধে নানা গাছের লতাপাতা, ডাল, শিকড় সংগ্রহে নেমে পড়ে। বেতের আগা, বটের পাতা, পাতাসুদ্ধ আমের ছোট্ট ডাল, কেয়ার ঝোপ, নিমপাতা, থানকুনিপাতা, বাঁশের ডগা, বাসকপাতা ইত্যাদি সংগ্রহ করে উঠোনের ঠিক মাঝখানে স্তুপ করে রাখে তারা। একে বলে ‘যাক’ দেওয়া। চৈত্রসংক্রান্তির ভোরসকালে প্রত্যেক সন্তানবতী জেলেনী তার সন্তানদের মঙ্গলাকাক্সক্ষায় সেই স্তুপিকৃত সংগ্রহশালায় বা ‘যাকে’ পূর্বমুখী হয়ে ভক্তিভরে আগুন দেয়। জেলেনীরা কাকডাকা ভোরে শয্যা ত্যাগ করে তাদের সন্তানদের একে একে বিছানা থেকে তোলে। সবাইকে এনে সেই যাকে’র পাশে দাঁড় করায়। তারপর জেলেনীরা আগুন দেয় ‘যাকে’। অল্প সময়ের মধ্যে সেই ‘যাক’ হতে গল গল করে ধোঁয়া বেরোতে থাকে। ‘যাকে’র পাশে দাঁড়ানো সন্তানদের চোখেমুখে, সমস্ত শরীরে ‘যাক’ থেকে নির্গত ধোঁয়া লাগে। এই সময় জেলেনীরা উচ্চ স্বরে বলে-
যাক্রে যাক্, যত আপদ বালাই আছে,
বিয়া¹িন হাত দইজ্যা পারই যাক।
যত টিয়া পইসা ধন-দৌলত আছে,
বিয়া¹িন আঁর পোয়ার সিন্দুকত থাক্।
এই কথাগুলির মধ্যে জেলেনীদের নিবিড় কামনা ঝরে ঝরে পড়ে। নারীরা কামনা করে নিজের পুত্র, তার সন্তান-সন্ততির যে বিপদ-আপদ, রোগ-বালাই, শত্রু আছে সেগুলো যেন ‘হাত দইজ্যা’ অর্থাৎ সাত সমুদ্র পার হয়ে ওই-ই সুদূরে চলে যায়। পৃথিবীর যত ধন-সম্পদ আছে সবগুলো যেন তার সন্তানের সিন্দুকে ওঠে। একজন অভাবী নারীর এই আকাক্সক্ষা কখনো পূরণ হয় না। যদিও অভাবের লেজে আগুন লাগা জীবন এগিয়ে যায় সময়ের সমান্তরালে।
তবে হরিচরণ দাসের শৈশবে ফাল্গুনের শেষে চৈত্রের মাঝামাঝি আসতে না আসতেই একটু আধটু নড়েচড়ে উঠতো তিতাসের জল। নদী তীরে সামান্য ঢালু তটের উপর রোপন করা কচি বোরো ধানের পাদদেশে এসে জেলে পাড়ার কিশোরী বধূটির মতো উঁকি ঝুঁকি মারত নতুন জল। আর চৈত্রের শেষে তো সে জল মঞ্জুরিত-বিকশিত হয়ে নুপুরপড়া কিশোরীর মতো নেচে গেয়েই জানানই দিতো। টলমলে জল বার্তা নিয়েই আসতো আগমনী বর্ষার। কোনমতে বৈশাখ আসতে না আসতেই স্বচ্ছ জলে লাফিয়ে উঠা স্বরপুটি মাছের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে উঠতো ছোট ছোট ঢেউ। জলদাসদের উৎসাহ উদ্দীপনা বেড়ে যেতো। দ্বিগুণ উৎসাহ-উদ্দীপনায় ডিঙি আর উতার ভাসাইত সেই জলে। জেলেবধূরা জোকার আর উলুধ্বনি দিয়ে শুভবার্তা জানাত তাদের স্বামী-পুত্রদের। বিকেল বেলায় মাছধরা নৌকাগুলি কাঞ্চনপুর ঘাটে ভিরলে তলাভর্তি থাকত নতুন পানির নতুন মাছে। পাঙড়া, শইল, কানলা, গুছি, কালি বাউস ইত্যাদি মাছে ভরে উঠত নৌকার তলা। আর বড় বড় পুটি ও স্বরপুটিগুলিকে মনে হতো তলায় ছড়ানো মাছ না চকচকে সিলভারের কাচা টাকা। পাইকার আসত ঘাটে। মাছ বিক্রি করে কাচা টাকা গুনে নিয়ে ভর্তি করত কোমরের হুতি। কোন কোন জেলে আবার আরো বেশি দামে বিক্রি করা জন্য মাছ নিয়ে যেতো দূরের হাটে। মদ্দিনগর বাজার, কালিগঞ্জ বাজার ইত্যাদি বাজারে নিয়ে বিক্রি করত তাদের জালে ধরাপড়া মাছ। টাকা পেতো হুতি ভর্তি করে। জল, জাল আর জেলে মিলেমিশে একাকার হয়ে উঠতো চারপাশ।
আর এখন চৈত্র সংক্রান্তি শেষ হলো কতদিন। সাধ্যমতো জেলেপাড়াতে চৈত্রসংক্রান্তি অনুষ্ঠানও পালিত হয়েছে। সংকান্তির এক-দুইদিন আগে বাঁশের খোপে জমানো টাকা স্বামীর হাতে তুলে দিয়েঠে জেলেনীরা। সেই টাকা দিয়ে ভাদুঘর বাজার থেকে শিমবিচি, সিদ্ধচাল, খৈ-এর ধান, গুড়, নারকেল, কাঁচাবাদাম কিনে নিয়ে এসেছে কাঞ্চপুরের জলপুত্ররা। ঠাকুমারা, মায়েরা, পিসিরা, সারারাত জেগে মুড়ি-খৈ ভাজে, মোয়া-নাড়–, আটকড়ইয়া তৈরি করেছে।
চৈত্রের শেষ দিনে উঠোনে আগুন জ¦ালানোর জন্য আগের দিন বিকেলে জলপুত্ররা দলবেঁধে নানা গাছের লতাপাতা, ডাল, শিকড় সংগ্রহে করে ‘যাক’ দেয়েছে। চৈত্রসংক্রান্তির ভোরসকালে প্রত্যেক সন্তানবতী জেলেনী তার সন্তানদের মঙ্গলাকাক্সক্ষায় সেই স্তুপিকৃত ‘যাকে’ পূর্বমুখী হয়ে ভক্তিভরে আগুন দিয়েছে। সন্তানদের সবাইকে এনে যাকে’র পাশে দাঁড় করিয়েছে। ‘যাক’ থেকে নির্গত ধোঁয়া তাদের নাকে-মুখে লাগিয়েছে এবং উচ্চ স্বরে যাক্রে যাক্, যত আপদ বালাই আছে, বিয়া¹িন হাত দইজ্যা পারই যাক, ইত্যাদি বলে মন্ত্র পাঠ করেছে। তিতাস পাড়ের সেই সব অভাবী নারীর এই আকাক্সক্ষা কখনো পূরণ হয় নি। আজও না।
এছাড়াও ঘর-দোয়ার লেপা-মোছা করে টন টনে করে তুলেছে জেলেনীরা। শা¯্রে না থাকলেও বিশ^াসের কারণে প্রত্যেক জেলেনী চৈত্রসংক্রান্তির সকালে ঘরের আইতনা-পীড়ায় গুবরের মুঠো মুঠো স্তুপ করে তাতে বরুণ ফুল এনে রোপন করেছে। তাদের শিশু সন্তানদের পেটনামা বা ডায়রিয়া হতে বাঁচানোর জন্য। এসব আয়োজন দেখেও ঘুম ভাঙেনা নদীর। তিতাসের বুকে এখনো হাহাকার। তলানিতেই পড়ে আছে সামান্য জলটুকু। শুকিয়ে-বিলিন হয়ে হাড় ঝিরঝিরে হরিচরণ দাসের মতোই এখন এর অবস্থা। তিতাস যেন এখন হরিচণেরই অন্যসংস্করণ-পরিপূরক। বিগত যৌবনার মতো এর প্রতিটা বাঁক-সারা শরীর। নদী বলাই দুস্কর এখন মরা এ তিতাসকে।
তবু তাকিয়ে থাকে হরিচণ। তাকাবার অভ্যাসেই কেবল তাকানো। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে বানকুন্ঠির ভেতর ঘুরতে থাকা ধূলি, খড়কোটা আর শোকনো পাতার মতো ঘুরতে ঘুরতে আশার বুকে বাসা বানতে চেষ্টা করে সে। মা লক্ষি যদি একটু সদয় হয়। তিতাসের পানি যদি একটু বাড়ে। নৌকা আর জাল নিয়া যদি জলে নামতে পারে জলদাসরা। তিতাসকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা ছাড়াতো তার স্বপ্ন দেখার মতো আর কোন অবলম্বনও নেই। নিজের জন্য না। তার তো দু‘কাল চলেই গেছে। তিন কালও শেষের পথে। তাই নিজের জন্য না হোক কাঞ্চনপুরের এই একশত ত্রিশ ঘর জলদাসদের জন্য হলেও তাকে স্বপ্ন দেখতে হয়। তিতাসের জলের মতোই যাদের সংখ্যা কমতে কমতে একেবারে তলানিতে এসে ঠেকেছে তাদের জন্য।
তিতাসকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে তার মনে হয় তিতাস যদি আগের মতো হয়ে উঠতো! ফিরে পেত যৌবন! তার শৈশবের তিতাসকে যদি আবার ফিরে পেতো তারা। তাহলেই তো অভাব দূর না হলেও চারটা মোটা ভাত ও মোটা কাপড়ে খেয়ে পড়ে বাঁচতে পারতো এই একশত ত্রিশ ঘর জলদাসরা।
এসব কথা ভাবতে ভাবতে তার মনের ভেতর এসে প্রবেশ করে তার শৈশবের তিতাস। যার বুকভরা ঢেউ আর কূলজুড়া উচ্ছাস। হরিচরণ দাসের ভেতর আরেক হরিচরণ দাস। দূরন্ত এক কিশোর নড়েচড়ে উঠে তিতাস পাড় ঘেষা এ কাঞ্চনপুর গ্রামে। একে একে তার মানসচোখের সামনে ভেসে আসতে থাকে সুদুর অতীত। পাশর্^বর্তী গ্রাম ভাদুঘরের মেলার মাঠ, চৈত্র মাসের চৌদ্দ তারিখে সে মাঠের সপ্তাহব্যাপী মেলা, দূরে নবীনগরের কৃষ্ণনগরে গিয়ে পুতুল নাচ দেখা, নাটঘরের মেলায় গিয়ে নাগরদোলায় চড়া, চৈত্রসংক্রান্তি পালনের জন্য দলবেঁধে লাকড়ি সংগ্রহ করা আর ভরা বর্ষায় তিতাসের ¯্রােতে সাঁতার কাটা দুরন্ত কৈশোর হরিচরণ দাস।
বৈশাখ মাস সমাগত হলে তিতাস পূর্ববর্তী নি¤œভূমিতে বুরো ধান কাটা শুরু হতো। এখানকার স্থানীয় কৃষক-কামলা ছাড়াও সুদূর ময়মনসিংহের সম্ভুগঞ্জ, হালুয়াঘাট, ফুলপুর ইত্যাদি অঞ্চল হতে দলে দলে মৌসুমী শ্রমিকরা আসতো। স্থানীয় দুধ বাজারে সকাল সকাল অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় তরিতরকারি, মাছ-দুধের সাথে শ্রমিকদেরও হাট বসতো। রাতে এসব শ্রমিকরা কৃষকের মান্ডবঘরে থাকতো আর যাদের স্থান কৃষকের বাড়িতে হতো না তারা রাত কাটাতো ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেল স্টেশনে। জমির মালিকগণ দাম-দর রফা করে শ্রমিকদের নিয়ে যেতো ধান কাটার জন্য।
তিতাসের জল পোয়াতি বধুর মতো একটু একটু করে ফুলে উঠতো। তার বুক তখন আর শূন্য থাকতো না। সদ্য যৌবনের ঢেউ লাগা কিশোরীর বাড়ন্ত শরীরের মতো নতুন জলের ধাক্কা তীরে এসে লাগতো। জেলেপাড়াতেও চলত উৎসব আয়োজন। দিনমান চলতো যে সমস্ত নৌকা তখনো মেরামতের কাজ শেষ হয়নি, সেগুলিকে মেরামত করার ব্যস্ততা। লোহার উপর হাতুড়ি পেটানো ড্যাব ড্যাব শব্দ। মেরামত করা নৌকায় আলকাতরা দেওয়া। ছিড়াফাড়া পুরানো জালগুলিকে গড়া দেওয়া, নতুন জালে গাব দেওয়া। পেটের কাছে ছলার চট বেধে গাইল-ছিয়া নিয়ে জেলে বধূদের পাড় দিয়ে দিয়ে গাবের রস তৈরী করা। সন্ধ্যার পর জেলেপড়ার নারী-পুরুষ, যুবক-যুবতি ও শিশুদের নিয়ে বসতো আরতি অনুষ্ঠান। শুভদিন, শুভক্ষণ তখন তাদের দোরগোড়ায়। এই শুভদিনগুলিতে পুরো জেলেপাড়া উৎসবের আয়োজনে হতো মাতোয়ারা। তিতাস যেন জেলেপাড়ার কোন কূলবধূ। তাকে বরণ করে নেওয়ার জন্যই এ সমস্ত উৎসব-আয়োজন। জেলেপাড়ার এ সমস্ত উৎসব-আয়োজনের সাথে সাথে ভাদুঘর গ্রামেও চলতো মেলার প্রস্তুতি। ভাদুঘরের বৈশাখি মেলার ঐতিহ্য সে বহুদিনের। বহু দূর-দূরান্ত থেকে পণ্যের পসরা নিয়ে আসতো বিক্রেতাগণ আসতো ক্রেতারাও।
দূর-দূরান্ত থকে আসা লোকজনের খাওয়া দাওয়ার সুবিধার্থে আনুসাঙ্গিক বিভিন্ন পসরা সাজিয়ে বসতো ব্যবসায়ীরা। পরবর্তীতে এই জমায়েতটাই একটা উৎসবের রূপ লাভ করে মেলাতে পরিণত হয়। এখনও মেলা বসে। তবে হরিচরণ দাস এখনকার মেলায় সেই প্রাণ খোঁজে পায় না।
সুদূর প্রাচীন কাল থেকে চলে আসা আমাদের সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে যাওয়া কিছু মেলা আছে তন্মধ্যে ভাদুঘরের বান্নি বা বারণী অন্যতম। চৈত্র মাসের কৃষ্ণা ত্রয়োদর্শী শতভিষা নক্ষত্র যুক্ত হলে ওয বারণী যোগ হয় এবং সেই যোগে গঙ্গা স্নানের নাম বারুণী স্নান। ভাদুঘরের বান্নি ১৪ বৈশাখ প্রতি বৎসর অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। সকল ধর্মীয় লোকজনের এক মহামিলনে পরিণত হয় এই মেলা। মেলা উপলক্ষে ভাদুঘর এবং আশ পাশের গ্রাম সমূহে এক উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করতো। দূর-দূরান্ত থেকে এ সকল গ্রামের অধিবাসিরা বিশেষ করে মেয়েরা নাইওরী ও পুত্র বধুদের আতœীয় স্বজনদের অন্তত: এক সপ্তাহ আগেই নিমন্ত্রণ করে আনা হতো।
এ মেলার সময় স্থানীয় নরসুন্দর ও মুচি-চামাররা বিশ্বকর্মার উদ্দেশ্যে পুজা করতেন। তাদের পেশার সাথে সর্বক্ষণ খুর-কেচি-ছুরি অর্থাৎ দাতবজাত যন্ত্রপাতি জড়িত। এগুলির মাধ্যমে তারা কাজ করে থাকেন। এসব যন্ত্রপাতি ব্যবহারে যাতে কোন দুর্ঘটনা না ঘটে সেজন্য তারা বিশ্বকর্মার পুজা করে থাকেন। তাছাড়া বিশ্বকর্মাকে খুশি করতে পারলে তাদের পেশাগত কাজে উন্নতি আসবে এ বিশ্বাসেও এ পুজার আয়োজন করা হতো। তাদের পূজো অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রণ পেতো কাঞ্চনপুরের জলদাসরা। নিমন্ত্রণ পেতো সে গ্রামের কুমার সম্প্রদায়ের পোদ্দারাও। গভীর রাতে বোমা কুপি হাতে নিয়ে ভাব-গাম্ভীর্যের সাথে তিতাসের ফোলে উঠা স্বচ্ছ জলে মূর্তি বিসর্জন করতো পুজারিরা। তিতাস তীরে দাঁড়িয়ে সমস্বরে জোকার দিত মুচি-চামারদের স্ত্রী-কন্যারা।
আর এখন বৈশাখ-জৈষ্ঠ এলেও তিতাস কেমন কাঙাল হয়ে থাকে। উচ্ছাস নেই, আবেগ নেই, নেই নবজীবনের লেশমাত্র। তিতাসের দিকে তাকিয়ে থাকা দেখে ভাদুঘর থেকে বিকেলে নদী তীরে ঘুরতে আসা দু‘ একজন শিক্ষিত ছেলে-পুলে বলে, ‘তিতাসের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই হরিচরণ দা, তিতাসের কথা ভুলে যাও। তিতাসের কোলে তোমাদের আর আশ্রয় মিলবে না। তোমার তিতাসের সব জল শুষে নিয়েছে উজানের বাঁধ। ফারাক্কা বাঁধ, হোয়াই বাঁধ এসবের নাম শুননি।’ তাদের কোন কথার জবাব দিতে পারে না হরিচরণ। কেবল ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। তার এ তাকিয়ে থাকা দেখে তাদেরই একজন বলে-বুঝতে পারলানা হরিচরণ দা। তুমি তিতাসের যে তলানিটুকুর দিকে তাকিয়ে আছো। সেদিন খুব নিকটে যে, তা-ও শুকিয়ে যাবে। শুনতেছি ভারত-বাংলাদেশ ট্রানজিট হবে। নয়াদিল্লী বাংলাদেশের উপর দিয়ে রাস্তা করবে। ভারত তাদের পূর্বাঞ্চলীয় পঞ্চকন্যা নামে খ্যাত প্রদেশগুলির যাতায়াত ও মালামাল বহন কলকাতার সাথে সহজ করবে এ রাস্তা দিয়ে। তোমার তিতাস আর তিতাস থাকবে না। দৈত্যের মতো বড় বড় ভিকুর দেতেল আঁচড়ে তোমার তিতাসের বুক ফালা ফালা হবে। শুকিয়ে গিয়ে এর বুকে ধরবে পাষাণ ফাটল। মাছ তো দূরের কথা। তিতাসের দু‘তীরের ফসলের মাঠও শূন্য হয়ে খাঁ খাঁ করবে। তোমার তিতাস পাড় তখন মুরুভূমি হবে দাদা, আরব্য ডেজার্ট! সময় থাকতে পাড়ি দেও। অন্য পথের খোঁজ কর। প্রবাদ শোননি, ‘সময় থাকতে ধইরা খাও, বেলা থাকতে বাড়ি যাও।’ এসব কথা বলতে বলতে ছেলে-পেলেদের দলটি হাঁটতে হাঁটতে চলে যায়। তাদের এসব কথা-বার্তার মর্মার্থ উদ্ধার করতে পারে না হরিচরণ। এর সত্যি-সত্তা যাচাই করার মতো কোন জ্ঞান বা বুদ্ধিও আসলে নেই হরিচণের মাথায়। তবে এ টুকু বুঝতে পারে সে। আজ এন্ডারসন খাল কেটে তিতাসের পানি নামিয়ে নেওয়া, কাল উজানে বাধ দিয়ে পানি আটকে রাখা, পরশু ট্রানজিট রাস্তার নামে পুরো নদীটাকেই মেরে ফেলার কারণে তিতাসের জল আর জাল-মৎস নির্ভর জীবন যে তাদের দিনের পর দিন সংকোচিত হয়ে গেছে। সামনের আসন্ন দিনে যে তা আরো সংকোচিত হয়ে যাবে, সে বিষয়ে হরিচরণের কোন সন্দেহ নেই। চাষবাষ করলে জমির উপর কৃষকের অধিকার স্থাপিত হয়। কিন্তু শতবছর মাছ ধরলেও নদীর উপর জেলেদের কোন অধিকার স্থাপিত হয় না। জাল যার জল তার এসব কথার আর অর্থ কি! জল যদি না থাকে তাহলে জাল দিয়ে কি হবে! আর জাল না থাকলে তারা খাবে কি!
তাই তার ভাবনার শেষ নেই। ভাবতে ভাবতে আশপাশে হাতড়ে খুঁজে নেয় তামাকের মালসা ও টিক্কার চুঙ্গাটা। তারপর তার সাত বছরের নাতি সুপ্রিয়া রানী দাসকে ডাকতে থাকে। ‘কই গেলিরে সুপ্রিয়া। আরে সতিন তুই কই থাখছ সারাদিন। এ দিকে আই। আমার হুক্কাটা জ¦ালাইয়া নিয়া আই।’ সুপ্রিয়া হুক্কার কল্কিতে টিক্কা জ¦ালিয়ে ফু ফু দিতে দিতে হরিচরণের হাতে তুলে দিয়ে বলে- মায়ে কইছে অহন তোমার হুক্কা টানা কমাও। হুক্কার ধুমায় তোমার কইলজা পুইড়া নাকি ছাই হয়ে গেছেগা। দেখনা তোমার কাঁশি উঠলে আর থামতে চাই না। আমরার ইশকুলের স্বাস্থ্য আপাও ধূমপানের বিরুদ্ধে অনেক কথা কইছে। সুপ্রিয়ার এসব কথারও কোন জবাব দেয় না হরিচরণ। তার মাথার ভেতর এখন তিতাসের শুকিয়ে যাওয়া নিয়ে যাবতীয় চিন্তা। তাই হুক্কাতে টেনে টেনে গুরগুরি তুলতে তুলতে ভাবতে থাকে সে। সত্যি সত্যিই তিতাস শুকিয়ে যাবে! তলানিটুকুও আর অবশিষ্ট থাকবে না! বর্ষা আসলেও না! তাইলে ওরা এ একশত ত্রিশ ঘর জলদাসরা যাইবে কই। দেশ স্বাধীনের পঞ্চাশ বছর পরও কি তাদের দেশান্তরি অইতে অইব!
১৯৪৭ সালের দেশ ভাগের পর অনেক জলদাস তাদের বাপ-দাদার পেশা মাছধরা পরিত্যাগ করে দেশান্তরি হয়ছে। এর পর তাদের জীবন যে নির্বিঘœ ছিল তা নয়। রাজনৈতিক-সামাজিক বিভিন্ন রকম নিপিড়ন-নিস্পেষণ তাদের উপর ছিলই। তবু তারা দেশ ত্যাগ করেনি। প্রতি পরিবারেরই কারোর না কারোর প্রাণ গেছে দুর্ভিক্ষের সময় খাদ্যের অভাবে। বেঘোরে মরেছে মানুষ না খেয়ে। বেঁচে থাকা মানুষগুলির নিদারুণ যন্ত্রণার ভেতর দিয়ে পাড় করেছে পঞ্চাশের মন্বন্তর। এরপর ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ এলো। জলদাসদের কেউ কেউ মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করল। কেউ কেউ হানাদারদের আক্রমণের শিকার হলো। বাদ-বাকিরা আগরতলায় আশ্রয় নিল। কি নিদারুণ জীবন-যাপনই না করেছে তখন এ দাসরা। তাদের অনেক আত্মীয়-স্বজন যারা তড়িঘড়ি করে ত্রিপুরায় আশ্রয় নিতে পারেনি, তাদের হত্যা করেছে হানাদার বাহিনী। তথাপি দেশ যখন স্বাধীন হল, তখন কেউ কেউ ফিরে না এলেও কাঞ্চনপুরের অনেক জলদাসই স্বাধীন দেশে তাদের পৈত্রিক ভিটাতে ফিরে এসেছিল। জীবনের তাগিদে জাল আর জলকে করেছিল জীবন-জীবিকার অবলম্বন। ভাবতে থাকে হরিচরণ। একাত্তরে পশ্চিমা হানাদের হত্যাযজ্ঞ এ জলদাসদের ডালপালা নিশ্চিহ্ন করলেও শিকড় থেকে তাদের উচ্ছেদ করতে পারেনি। আর এতদিন পর কি না কি ট্রানজিট নামের রাস্তা ফালা ফালা করবে প্রাণের তিতাসের বুক। শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবে এর তলদেশও। এ যে তিতাসের বুক ফালা ফালা করা না। তিতাস তীরবর্তী গ্রাম কাঞ্চনপুরের একশত ত্রিশ ঘর জলদাসদের বুক চিরে ফালা ফালা করা। তারা তখন আশ্রয়ের জন্য কই যাইবে। জল আর জাল ছাড়া যে তাদের আর অন্য কোন অবলম্বনের কথা জানা নাই। একথা কি কোন দিন বুঝবার পারব না ঐ করিডোর ওয়ালারা। এসব ভাবতে ভাবতে কখন যে বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এলো তিতাস আর কাঞ্চনপুরের প্রকৃতিতে সেদিকে খেয়াল করেনি হরিচরণ দাস। এক ঝাক কাক কা কা শব্দ করে বিদায়ী বার্তা জানিয়ে উড়ে গেল। একটি বাঁদুর তার পাখা ঝাঁপটিয়ে একেবারে হরিচরণের মাথার কাছ দিয়ে উড়ে চলে গেল। হুক্কার সুখটানটা এবারও শেষ করতে পারল না। এরই মধ্যেই উমাচরণ কর্মকারের মতো কোন এক অদৃশ্য কারিগর যেন বিরামহীন দড়ি টানা শুরু করল। বুকের ভেতরের উঠানামাটা দ্রুত হতে থাকলো। হল্লুর হল্লুর কাশিটাও বেড়ে চলল বেদম। ভেতরের হাতুড়িপেটাটা প্রচন্ড রকম টের পাচ্ছে হরিচরণ। তার শৈশবে দেখা ভরা বর্ষায় তিতাসের ঢেউয়ে উদলা ডিঙি নৌকার গুলুইয়ের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে কাশতে থাকে হরিচরণ। কাশতে কাশতে তার দু‘চোখে আঁঠালো জল জমে উঠে। ঘোলাটে চোখে সন্ধ্যার আঁধারটা যেন নিকষ কালো হতে হতে স্তুপাকার হয়ে উঠে হরিচরণ দাসের কাছে। তারপর গাব ভেজানো পানির মতো তরল কৃষ্ণকায় বিষাদমাখা অন্ধকারটা বিস্তৃত হতে হতে পরিণত হতে থাকলো পৃধিবীর মতো বলশালী দৈত্যাকৃতির একটি ভয়ঙ্কর শকুনে। যার বিস্তৃত-ভয়াল থাবার নিচে তখন কাঞ্চনপুরের পুরো জেলে পাড়াটা। এবং যার কুৎসিৎ-কদাকার ধারালো নখযুক্ত পা দু‘টি নেমে এলো হরিচণের মুখের কাছে। তখন অন্ধকারের ভেতর দিগি¦দিক পথ হাতড়াতে থাকে বুড়ো হরিচরণ।
লেখক সম্পর্কে

-
লেখক পরিচিতি-
আমির হোসেন ১৯৭৩ সালে ৫ জানুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার গৌরনগর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম মো. সুরুজ মিয়া ও মাতার নাম গুলবরের নেছা। তিনি ১৯৯৬ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গণিতে অনার্সসহ এম এস সি ডিগ্রী অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি ২০০৩ সালে বি এড ও ২০১৫ সালে এল এল বি ডিগ্রী অর্জন করেন।
প্রকাশিত গ্রন্থ- নিমন্ত্রিত তমসা (কবিতা), ঝরাফুলের সুরভি (উপন্যাস), দার্শনিক কবি মাশরেকীর জীবন ও সাধনা (গবেষণা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ইতিহাস (গবেষণা), জলময়ূরীর পেখম (গল্প), জলের গহীনে নীল জোছনা (কবিতা), মালালার আর্তনাদ (উপন্যাস), তোমার হরিণমায়া চোখ (গল্প), চালাক কুমির ও বোকা শেয়াল (শিশুতোষ গল্প), সিঁদুরের দেয়াল (উপন্যাস), রমেশ ঋষির সংসার (গল্প), ক্লান্তিহীন এক অভিযাত্রী মোকতাদির চৌধুরী (গবেষণা), ছোটদের বঙ্গবন্ধু (গবেষণা), সুখ নগরের সারথি (কবিতা), বাঁশির সুরে পরীর নাচ (শিশুতোষ) ও তিতাস পাড়ের গল্প (গবেষণা), মুক্তিযুদ্ধের গল্প (গল্প), মায়াবী মদিরাক্ষী ( কবিতা), বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবার (গবেষণা), বৃহন্নলা (উপন্যাস) ও হিরালী ও অন্যান্য গল্প (গল্প) ।
সম্পদনা- স্বদেশ, মিডিয়া ওয়ার্ল্ড, চিনাইরবার্তা ডটকম ও শোকাঞ্জলি।
তিনি ২০০৮ সালে দৈনিক যুগান্তর পত্রিকার (স্বজন সমাবেশ) বর্ষ সেরা লেখক সম্মাননা, ২০১৩ সালে তিতাস আবৃত্তি সংঠন সম্মননা পদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২০১৪ সালে জননী সাহিত্য পদক, রাজশাহী, ২০১৪ সালে ইদ্রিস খান স্মৃতি সম্মননা পদক, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ২০১৪ সালে কবি এম. আমজাদ আলী স্মৃতি পদক, রাজশাহী, ২০১৫ সালে ‘মেঠোপথ’ সাহিত্য পদক কিশোরগঞ্জ, ২০১৮ সালে বেস্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানী পুরস্কার ও ২০১৯ সালে সুমিতা সাহিত্যপত্র সম্মাননা, আগরতলা, ত্রিপুরা, ভারত লাভ করেন। তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
সর্বশেষ লেখা
গল্প২০২২.০২.০৯পাগলি – আমির হোসেন
গল্প২০২০.০৯.১১শাকিলার দু’চোখ ঝাপসা হয়ে আসে – আমির হোসেন
গল্প২০২০.০৯.১১উত্তরাধিকার – আমির হোসেন
গল্প২০২০.০৮.২৫অনন্ত অভিমুখে – আমির হোসেন